স্বদেশ ডেস্ক: এসএ গেমসের ইতিহাসের সেরা সাফল্য নিয়ে আজ থেকে ফিরতিযাত্রা শুরু করবে বাংলাদেশের ক্রীড়াবিদরা। সাফল্যটা বেশি সোনা জয়ের। কিন্তু পদক তালিকায় অবস্থানে কোনো উন্নতি ঘটেনি বাংলাদেশের। ৭ দেশের গেমসে তাদের অবস্থান পঞ্চমে। স্বর্ণপ্রাপ্তি যেমন সন্তুষ্ট করেছে বাংলাদেশকে, ঠিক তেমনি অনেক ডিসিপ্লিনেই আগের চেয়ে খারাপ ফলাফল ভাবিয়ে তুলছে বাংলাদেশ অলিম্পিক অ্যাসোসিয়েশনের কর্তাদের। গেমসের শেষ দিনে তাই তাদের কাছ থেকে মিলেছে মিশ্র প্রতিক্রিয়া। তবে একটা জায়গায় তাদের একটাই কথা। যারা দেশকে সোনার পদক এনে দিয়েছেন, দেখিয়েছেন তাদের খেলায় রয়েছে সম্ভাবনা, সেসব খেলাই ভবিষ্যতে প্রাধান্য পাবে।
গেমসের প্রথম দিন থেকেই কাঠমান্ডুর বিভিন্ন ভেন্যুতে ঘুরে বেড়িয়েছেন বিওএ মহাসচিব সৈয়দ শাহেদ রেজা। যেখান থেকেই পেয়েছেন সুখবর, সেখানেই ছুটে গেছেন। কোনো ক্রীড়াবিদ অসুস্থ হয়ে পড়লে দৌড়ে তাকে দেখতে গেছেন। গেমসের শেষ দিন এই কর্তা বলেন, ‘রেকর্ড সোনা জয়ে আমি সত্যি খুব খুশি। প্রত্যাশা যা নিয়ে এসেছিলাম তার খুব কাছাকাছি যেতে পেরেছি। কিন্তু কিছু কিছু ডিসিপ্লিনে খারাপ করেছে। যে রুপাগুলো পেয়েছি এর মধ্যে সোনার প্রত্যাশা ছিল। গতবারের চেয়ে দ্বিগুণ রুপা পেয়েছি। কিছু কিছু হেরেছি পয়েন্টের জন্য। যদি এগুলো সোনা হতো তাহলে আমাদের অবস্থান আরও ভালো থাকত।’ রেজা আরও বলেন, ‘আমাদের কিছু খেলাকে আলাদা করে ফেলতে হবে। আন্তর্জাতিক আসরে পদকের জন্য যদি খেলতে হয় তাহলে যেসব ডিসিপ্লিনে সোনা জিতেছি সেগুলোকে প্রাধান্য দিতে হবে। মার্শাল আর্টে অনেক আছে। একেকটা ২৫-২২টা ইভেন্ট। এগুলোকে যদি নিজেদের নজরদারিতে নিয়ে আসি এবং দীর্ঘমেয়াদি ট্রেনিংয়ের আওতায় আনা হয়, তাহলে সেখান থেকে যদি শতকরা ২৫ ভাগও সঠিকভাবে নিতে পারি তাহলে আমাদের সোনার পদক ৪০-৫০ টার কাছাকাছি নিতে পারব।’
বাংলাদেশের শেফ দ্য মিশন আসাদুজ্জামান কোহিনুর নেপালের অভিজ্ঞতা থেকে মনে করেন দেশের খেলার উন্নয়নে প্রশিক্ষণ যেমন প্রয়োজন, তেমনি প্রয়োজন অবকাঠামোর উন্নয়ন, ‘স্বর্ণপদকের সংখ্যার দিক দিয়ে আমরা সন্তুষ্ট। ২০১০ কে আমরা ছাড়িয়ে গিয়েছি। তবে বড় গেমসগুলোতে ভালো করতে হলে প্রশিক্ষণ ও দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনার বিকল্প নেই। ক্রীড়াঙ্গনের অবকাঠামো উন্নয়নের বিষয়গুলো নিয়ে ভাবনার প্রয়োজন আছে। মাঠের খেলা এবং অবকাঠামোগত দিক দিয়ে নেপাল অনেক এগিয়ে গিয়েছে। তাদের কাছ থেকে শিক্ষা নেওয়া প্রয়োজন।’ বিওএ সহ-সভাপতি এবং মিডিয়া কমিটির প্রধান শেখ বশির আহমেদ মামুন সফলদের স্বীকৃতি দেওয়ার পাশাপাশি ব্যর্থতার তিরস্কার করার কথাও বলেছেন, ‘আমাদের নীতিমালায় আছে পদক জিতলে কে কত পাবে। এর সঙ্গে যারা ব্যর্থ হবে, তাদের তিরস্কারের ব্যবস্থাও করা উচিত। আমরা দেশে ফিরে ডিসিপ্লিন অনুযায়ী সবার ফলাফল খতিয়ে দেখব। আমরা অনেকগুলো রুপা জিতেছি এবার। এর অনেকগুলোই স্বর্ণপদক হতে পারত। কেন সেটা হলো না। কী করলে ভবিষ্যতে পদকের রং বদলানো যাবে, সেভাবেই পরিকল্পনা করতে হবে। নেপাল আড়াই বছর ধরে প্রস্তুতি নিয়েছে। যার ফল তারা পেয়েছে ৫০ সোনার পদক জিতে। সাফল্য পেতে চাইলে আমাদেরও সে পথে হাঁটতে হবে।’
এই অনুধাবনটা প্রতিটি গেমসের পরই হয় কর্তাদের। কিন্তু সময় গেলে তারা সবকিছুই ভুলে যান। দেখা যায় একই চিত্রÑ কোনো আসরের আগে ছ’মাসের প্রস্তুতির ব্যবস্থা করা। এরপর ক্রীড়াবিদদের ওপর প্রত্যাশার পাহাড় চড়িয়ে দেওয়া। এই সংস্কৃতি থেকে কবে বের হবে বাংলাদেশ?